আরাফাত হোসেন বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বগুড়ার নন্দীগ্রামে ২০ শয্যা হাসপাতাল শুধু নামেই রয়েছে। ওপারেশান থিয়েটার সহ মূল্যবান চিকিৎসা সরঞ্জাম ১৯ বছর আগে উদ্বোধনের সময় যেভাবে আনা হয়েছিল এখন সেগুলো যন্ত্রপাতির অধিকাংশ নেই বললেই চলে। যেগুলো রয়েছে সেগুলো ধুলাবালির স্তুপে মিশে একাকার। শুধু মাত্র একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত আর এমও, নার্স ইনচার্জ ১জন, মিডওয়াইফ ও ফার্মসিস্ট ১জন কে দিয়েই চলছে হাসপাতালটির বহিঃবিভাগ। হাসপাতালটি নির্মাণে তৎকালীন সরকারের সাড়ে তিন কোটি টাকারও বেশী খরচ হলেও চালু না হওয়ায় তা এলাকা বাসির কোন কাজে আসছে না। জানা যায়, ২০০২ সালে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলার পৌর সদরে এই ২০শয্যার হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জনবল নিয়োগ ছাড়াই ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার শেষ মুহুর্তে হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন সাংসদ ডা: জিয়াউল হক মোল্লা। দীর্ঘ ১৯ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ চালু হয়নি হাসপাতালটি। বগুড়ার মাটি বিএনপির ঘাটি, বগুড়া জেলায় তারেক রহমানের বাড়ি ও তারেক রহমান ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার কারণে আওয়ামী লীগ সরকার হাসপাতালটির দিকে কোন গুরুত্ব দেয়নি। এমন কি বগুড়া-০৪ আসনের বিএনপির সাবেক এমপি আলহাজ্ব মোশারফ হোসেন এমপি থাকাকালিন সময়ে সংসদে গিয়ে বার বার হাসপাতালটির কথা উত্থাপন করলেও কোন আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। ১লক্ষ ৫৭ হাজার মানুষের বসবাস এই উপজেলায়। হাসপাতালটি ব্যবহার না করায় হাসপাতালের বিছানা ও আসবাবপত্রে ধুলাবালির আস্তরণ জমেছে। ঘুনপোঁকা ভবনের দরজা-জানালায় বাসা বাঁধায় খুলে পড়ছে দরজা জানালার কপাট। সরেজমিনে এলাকাবাসির সাথে কথা বলে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থান উপজেলা সদর থেকে অনেকটা দুরে অর্থাৎ বিজরুল বাজারে অবস্থিত। উপজেলা সদরে কোন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় পৌর শহরসহ আশেপাশের বিপুল সংখ্যাক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। এদিকে ২০শয্যা হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণ সহ আনুসাঙ্গিক খাতে ব্যায় হয় ৩কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এরপর দীর্ঘ ১৯ বছরেও জনবলের অভাবে হাসপাতালটি আর চালু হয়নি। ফলে হাসপাতালের বিশাল ক্যাম্পাস জুড়ে ঘাস ও বিভিন্ন গাছ-জঙ্গল গজিয়েছে। আবাসিক ভবনগুলো নষ্ঠ হতে চলেছে। সরেজমিনে নন্দীগ্রাম ২০ শয্যা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রধান ফটক ও ষ্টোর রুম ছাড়া সব কক্ষে তালা ঝুলছে। হাসপাতালের একটি কক্ষে চলছে বর্হিঃ বিভাগের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। মিডওয়াইফ মাধবীলতার সাথে কথা বললে তিনি জানান, প্রতিদিন এখানে গড়ে ১০ থেকে ২০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। সরকার কর্তৃক কোন ওষুধ বরাদ্দ না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া রোগীদের কোনো সেবা দেওয়া যাচ্ছেনা।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা : তোফাজ্জল হোসেন মন্ডল বলেন, তারেক রহমান ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করার কারণে এখনো চালু হয়নি ২০শয্যা হাসপাতাল, হাসপাতালটি খুব দ্রুত চালু করা প্রয়োজন।
জানতে চাইলে বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোশারফ হোসেন বলেন, ২০ শয্যার হাসপাতালটি চালু করার বিষয়ে সংসদে বারংবার কথা বলেছি। এছাড়াও ২০২২ সালে হাসপাতালটি পুর্ণাঙ্গ ভাবে চালু করার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেছিলাম। আমাদের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হাসপাতালটি ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন। আমি সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে বেশ কয়েকবার হাসপাতালটি পুর্ণাঙ্গ চালু করার জন্য জোর দাবী জানিয়েছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার হাসপাতালটি চালু করার ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই । তাই আমি এমপি থাকাকালীন সময়ে যেভাবে আমার নির্বাচনি এলাকার মানুষদের পাশে ছিলাম এখনো আছি আগামীতেও থাকবো। আমার নন্দীগ্রামে হিন্দু মুসলিম মিলে প্রায় ১লক্ষ ৫৭ হাজার মানুষের বসবাস, আমি হাসপাতালটি চালু করার জন্য সংসদে অনেকবার কথা বলেছি আওয়ামী লীগ সরকার চালু করে নাই তবে আমি হাল ছাড়ি নাই, চালু করেই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এছাড়াও সাধারণ মানুষ হাসপাতালটি দ্রুত চালু করার জোর দাবী জানান।

 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
								                                                                                     
                                    
 
                                     
                                     
                                 
                                 
                                 
                                